আহ কথা নাই বার্তা নাই হঠাৎ বাসায় রেগে টেগে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। খুব জেদি ছেলে আমি, মাথাটাও খুব পাগলাটে কখন যে রেগে যাই তার থেকে কি বলে কয়ে বসি নিজেও জানিনা। এর বদৌলতে অনেক দুঃখ পোহাতে হয় আমাকে। আবার অনেক দুঃখ দিয়েও ফেলি প্রিয়মানুষগুলোকে তবে নিজের মন জগতের পাগলাটে আমির কাছে বারংবার হেরে যাই। আমিও খুব কষ্ট পাই সত্যিই কষ্ট পাই। হয়ত তারা জানে নাহ, তবে দিন শেষে তারাও আমারে নিয়ে অনেক খুশি আমার জন্যে তাদের মায়া মহব্বত কখনোই কমে যায়না। ভুলবুঝাবুঝিও হয় প্রচুর, হবেনাই বা কেনো আমাদের জেনেরেশন গ্যাপ টার ফারাক যে অনেক বড়। তবে সব কিছুর উর্ধে আমি একজন খারাপ মানুষ বটে টা আমি মেনেও নিয়েছি। যাক রাত ১২.৩০ টা, চন্দ্রখানা সেদিন অর্ধখানথেকেও বেশি চিকন। ঢাকাই রাত একটু সময় নিয়েই সে অন্ধকারে ডুব দেয়। একদম ফজরের খানিকটা আগে একটু থমকে যায়। তো ঘটনা হইতেসে আমি গন্ড মূর্খ একখান মেজাজ নিয়ে হেঁটেই যাইতেসি খুব সাহসী ছেলে হইলেও একটু ভয় পাচ্ছিলাম। যাক ব্যাপার নাহ, একটু জোরে সরে হাটা শুরু করলাম।
কলের পর কল আসছে বড় আপু, নানু, আব্বু এবং আম্মু কেউই বাদ পড়লোনা। তো কারোর কলই ধরলাম না, হাঁটতেসি আর নিজেরে গালমন্দ করে যাচ্ছি। কেনোই বা এত্ত ঘাড়ত্যাড়া মানুষ আমি, আমার বাবা মা রে এত্ত কষ্ট দিয়ে আমার কি লাভ। যাওয়ার পথে ২টা রিকশা দেখতে পাইলাম ২টা পরিবার ৮জনের মতো মানুষ হবে রাতের রাস্তায় স্বজোরে গলা মিলিয়ে একসাথে মনের আনন্দে গান গাচ্ছে , "সাদা সাদা কালা কালা" - আমি দেইখা প্রথম ভাবলাম কিসব উদ্ভট গান গাইতেসে পরিবার নিয়া। খানিকটা পরেই দেখলাম এক ভদ্রলোক তাদের দেখে খিল খিল করে হাসছে। গলায় একটা টাই পড়া তবে বুঝা যাচ্ছে বিরক্তির সহিত টান দিয়ে সেইটারে আলগা করে ফেলেছে, ইন করা শার্টও এলোমেলো। ঐদিন বাসায় ঝামেলা বাধায় ঘর থেকে বের হয়ে না যেয়ে আমার সাধারণ জীবনের প্রতিচ্ছবি নিয়ে বের হইলে হয়তো তার সাথে কতক্ষন আড্ডা দিতাম। যাকগে যা গেসে গেসে, এখন এত্ত বড় রাত কাটাবো কিভাবে? এই মুহূর্তে একটা এক্সিডেন্ট কইরা পইড়া থাকলেই বা কি হবে। ঢাকা শহর যেই খারাপ পুলিশ আইসা যদি সন্দেহ কইরা ধরে নিয়ে যায় তাইলে তো আরেক ঝামেলা। কতশত চিন্তা!ঘন্টা খানেক ভাবনা চিন্তা শেষ করে কল দিলাম আমার এক বন্ধু রে, তুললো না। কি আর করবো প্ল্যান নিলাম সদর ঘাট যাবো লঞ্চ পাইলে উইঠা পরব একদিন কাটাবো। সবাই যখন আমারে নিয়ে বেশি চিন্তিত হইয়া পরবে আবার ফিরেও আসবো।
কল আসলো এক বন্ধুর আমারে সে বললো তার বাসায় থাকতে পারবো আমি। সে কোনো প্রশ্নই করলোনা আমিও তেমন উত্তর দিলাম নাহ। গেলাম দৌড়াইতে দৌড়াইতে উঠলাম বাসায়, ততক্ষনে আমার মেঝো বোনের কল আসা শুরু হইলো। তার সম্পর্কে একটু বইলা রাখা ভালো, সে হলো আমাদের পরিবারের একমাত্র সন্তান যার মায়া জড়ানো শাসন আর চিল্লাচিল্লি আমাদের পরিবারখানারে একত্রিত করে রাখে। আর তার মতে দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ ছেলে আমি, আদব কায়দা নাই আমার মোটেও, আর ভরপুর গালমন্দ তো করতেই থাকে আমারে। সে এখন যুক্তরাষ্টে থাকে তার পরিবার নিয়ে। তো সেইখানে থেকেও আমার উপর খবরদারি কোনোরকম কম করেন না। একদম একবার ধরতে পারলে পোস্টমর্টেম করেই ক্ষান্ত হন। তো যাইহোক তার কলের পর কল, হুমকি ধামকি শুইনা অতিষ্ট হয়ে গেলাম। মেসেজে লিখলাম আমি বাইরে আছি সেইফ আছি। এতটুকু লেখার পর দেখলাম অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ফুটে উঠলো, টানা চিল্লাপাল্লা শেষ মেশ আমি আল্লাহ হাফেজ লেখে ঘুমানোর পায়তারা শুরু করলাম। বহুত প্রচেষ্টার করার পর ঘুমানোর ধারে কাছে যেতে পারলাম। দেখলাম আমি আমার লাশ, ধোলাইপাড়ের রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পইড়া আছে। নিজের ঐ বীভৎস অবস্থা দেখতে পারছিলাম না আর বড় একটা ট্রাক আমার দেহের উপর দিয়া উইঠা যাবে এমন সময় ফজর আজানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। হাফছেড়ে বাচলাম, আমি মরি নাই বাইচা আছি! নামাজ পড়লাম আবার ঘুম দিলাম। উঠেই বন্ধুর বাসা থেকে সোজা নিচে নেমে রিকশায় উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। মোবাইল চেক করে দেখলাম সকাল থেকে বহুবার কল দেয়ে হয়েছে আমাকে। গেলাম বাসায় ঢুকলাম। আম্মুর চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাইলাম না। আব্বুও চুপচাপ কিছু বললোনা আমাকে, আমার মনে হচ্ছিলো এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আসামি আমিই। সকালের খাবার দিলো আম্মু খেলাম। হঠাৎ সবাই যেন সব ভুলে গেছে কিছুই বললো না। সাধারণ আছে সব কিছু। আমিও আর sorry বা ক্ষমা চাওয়ার সাহস করতে পারলাম না। আর হয়তো বলতেও পারবো না, লেখাখানা লেখি রাখলাম কোনো এক সময় হয়তো আম্মুকে পড়তে দিবো। খুব হাসবো দুইজন এক সাথে। হয়তো আমার বোনেরা এসে আল্টো কইরা কান ধইরা একটা টান দিয়া বলবে তুই যে কত ঘাড়ত্যাড়া ছিলি দেখ। আমরা এক সাথে হাসবো, আরেকটা জিনিস বইলা রাখি। আমার মেঝো বোন মনে করেন "আমি নারীসঙ্গ লাভ করিয়া খারাপ হইয়া যাচ্ছি" তারে জানানোর জন্যেই লিখে রাখি, নাহ কোনো নারীর মোহই আমার পাগলা মেজাজখানারে আটকাইতে পারেনাই। আজকে অক্টোবর মাসের ২১ তারিখ ২০২৩ সাল, এই পুরা ঘটনা ২০ তারিখ রাত থেইকা শুরু হৈসিলো। যাইহোক এই হইলো ঘটনা।
Comments
Post a Comment